মেঘনা নদীর চাঁদপুর অংশে ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মরা মাছ ভাসছে।
মেঘনা নদীর তীরে ভেসে উঠছে প্রচুর মৃত মাছ ও জলজ প্রাণী। রোববার সকালে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার এখলাশপুর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা নদীর এখলাশপুর থেকে ছটাকি পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিপুল পরিমাণ মাছ, সাপ, ব্যাঙসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী মৃত অবস্থায় ভেসে উঠছে। পানির স্রোত ও ঢেউয়ে এসব মৃত প্রাণী তীরে জমা হয়ে স্তূপ তৈরি করছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এই ঘটনা চলছে। এর ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। একইসঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ এলাকার কারখানার বর্জ্য মেঘনা নদীর পানিকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। এর ফলে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়ে এই বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে।
আজ রবিবার সকালে মেঘনা নদীর মতলব উত্তর উপজেলার এখলাশপুর, চরকালিয়া, বাবুরবাজার, দশানী, ছটাকি, ষাটনল, মোহনপুর এবং এখলাশপুর এলাকায় নদীর পাড়ে ও তীরে দেখা যায় স্তূপাকারে পড়ে থাকা মৃত মাছ। নদীর মাঝখান ও একপাশে ভেসে উঠছে প্রচুর পরিমাণে দেশি প্রজাতির মরা মাছ। স্রোত ও ঢেউয়ের ধাক্কায় এসব মরা মাছ তীরে এসে জমা হচ্ছে। মৃত মাছের মধ্যে রয়েছে চেউয়া, সেলেং, মেদ, চিংড়ি, আইড়, কাঁচকি, বাইলা, চাপিলা ইত্যাদি। পাশাপাশি, কিছু জলজ প্রাণীর মৃতদেহও পাওয়া যাচ্ছে।
এলাকার স্থায়ী বাসিন্দারা জানান, মেঘনার এখলাশপুর থেকে ছটাকি পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার জুড়ে ভেসে উঠছে মরা মাছ এবং জলজ প্রাণী। এসব মৃত মাছ ও প্রাণীর কারণে পানির দূষণ বেড়ে গেছে এবং চারপাশে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফলে নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছেন। এরই মধ্যে কিছু স্থানীয় শিশু ও বাসিন্দা নদীর তীর থেকে এসব মরা মাছ সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার ষাটনল এলাকার বাসিন্দা মো. শান্ত জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে মেঘনার তীরে প্রচুর মৃত মাছ জমা হচ্ছে। মরা মাছের দুর্গন্ধে আশপাশের পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে। পানিতে মৃত মাছের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে দূষণ আরও মারাত্মক আকার ধারণ করছে। পানি ও মৃত প্রাণীর দুর্গন্ধ একত্রে আশপাশের এলাকার মানুষদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। ফলে নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষেরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন।
চরকালিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. দলিল উদ্দিন জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে মেঘনায় যেভাবে মরা মাছ ভেসে উঠছে, তাতে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এভাবে চলতে থাকলে জলজ প্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের উপরও মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এই পরিস্থিতির মূল কারণ দ্রুত চিহ্নিত করা জরুরি। পাশাপাশি পানিদূষণ বন্ধ করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের কারখানার বর্জ্য স্থানীয় নদীগুলোতে ফেলা হচ্ছে। সেই বর্জ্য মিশ্রিত পানি মেঘনায় প্রবেশ করে মিঠা পানিকে দূষিত করছে। এতে পানির পিএইচ এবং অ্যামোনিয়ার মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে, যার ফলে পানির অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে। অক্সিজেনের অভাব এবং অতিরিক্ত দূষণের কারণে ব্যাপক হারে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে বলে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে এবং দূষিত পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে।
Comments
Post a Comment